প্রশ্ন: প্লাস্টিসিটি কী? সব পলিমার প্লাস্টিক নয় অথচ সব প্লস্টিক পলিমার কেন? (Plasticity and Not all polymers are plastic but why all plastic polymers)
উত্তরঃ প্লাস্টিসিটি ও Plastic হলো পলিমার এর একটি রূপ। যেসব পলিমারকে তাপ দিলে তা নমনীয় হয় এবং চাপ দিয়ে বিভিন্ন আকৃতি দেয়া যায় তারই নাম প্লাস্টিক। আর প্লাস্টিক দ্রব্যের বৈশিষ্ট্যকেই বলা হয় প্লাস্টিসিটি। অর্থাৎ কোন পলিমারীয় দ্রব্যকে তাপ প্রয়োগে নমনীয় করে এর flexibility, প্রক্রিয়াকরণ এবং আকৃতি প্রদান যোগ্যতা বৃদ্ধি করার গুণাবলিকেই বলা হয় প্লাস্টিসিটি ।
বস্তুত সব পলিমারই প্লাস্টিক নয়। কারণ সাধারণত একটি পলিমারের দীর্ঘ চেইনের বিভিন্ন অংশের (segment) মধ্যে উচ্চ আর্কষণ বল বিরাজ করে যার কারণে পলিমার চেইনের অংশগুলোর নড়াচড়া (mobility) বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পলিমারের কাঠামো কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে পলিমার ভঙ্গুর হয়, বিশেষ করে নিম্ন তাপমাত্রায়।
যেমন- একটি রাবার বল –70°C এর নিচে শীতল করার পর যদি একে মেঝেতে ফেলে দেয়া হয় তাহলে বলটি ভেঙ্গে কাঁচের মত টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। এ বিষয়টির নাম ভঙ্গুরতা (brittleness)। এ তাপমাত্রাটি যার নিচে প্লাস্টিক ভঙ্গুরতা অর্থাৎ glassy কাঠামো লাভ করে এবং যে তাপমাত্রার উপর এটির ভঙ্গুরতা লোপ পেয়ে নমনীয় ও আকৃতি প্রদানযোগ্য হয় তবে গলেনা (গলন তাপমাত্রার নাম Tm) Glass transition temperature (Tg)
খুবই কম আণবিক ভরবিশিষ্ট পলিমারকে টার পলিমার (Tar polymer), কম আণবিক ভরবিশিষ্ট পলিমারকে অলিগোমার (Oligomer), উচ্চ আণবিক ভরবিশিষ্ট পলিমারকে উচ্চ পলিমার (High polymer) এবং অতি উচ্চ আণবিক ভরবিশিষ্ট পলিমারকে আলট্রা অই পলিমার (Ultra high polymer) বলা হয়ে থাকে ।
পলিমারের শ্রেণিবিভাগ: (Classification of Polymer): উৎসের উপর ভিত্তি করে পলিমারকে তিন ভাগে করা হয়ে থাকে।
(ক) প্রাকৃতিক পলিমার,
(খ) কৃত্রিম পলিমার,
(গ) অকৃত্রিম পলিমার।
(ক) প্রাকৃতিক পলিমার: (Natural Polymer): সাধারণভাবে প্রকৃতি অর্থাৎ উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে প্রাপ্ত পলিমার এ জাতীয় পলিমার । যেমন- প্রাকৃতিক রাবার, স্টার্চ, সেলুলোজ ইত্যাদি।
(খ) কৃত্রিম পলিমার: (Synthetic polymer) : পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত পলিমারসমূহ এ জাতীয় পলিমার। যেমন- পলিইথিলিন, পলিস্ট্যারিন, পলিভিনাইল ক্লোরাইড, নাইলন, টেরিলিন ইত্যাদি।
(গ) অর্ধকৃত্রিম: (Semi-artificial): প্রাকৃতিক পলিমারকে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত করে এ জাতীয় পলিমার উৎপন্ন করা হয়ে থাকে। যেমন- হাইড্রোজেনেটেড প্রাকৃতিক রাবার, হ্যালোজেনেটেড প্রাকৃতির রাবার, সেলুলোজ অ্যাসিটেট, সেলুলোজ নাইট্রেট ইত্যাদি।
প্রয়োগের দিক থেকে বিবেচনা করলে পলিমারকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা-
(ক) রবার (Rubber): সাধারণ অবস্থায় এদের উপর টান বা পীড়ন (strees) প্রয়োগ করলে এদের আকারের বিকতি ঘটে কিন্তু টান বা পীড়ন সরিয়ে নিলে পুনরায় পূর্বের আকার বা অবস্থায় ফিরে আসে। যেমন- প্রাকৃতিক রবার পলিবিউটাডাইইন রবার জাতীয় পলিমার অনিয়তাকার ও উচ্চ আণবিক ভর সম্পন্ন হয়। এরে প্রসারণশীলতা ও টানশক্তির মান খুবই উচ্চ এবং এ মান 300 psi হতে 3000 psi পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
(খ) পাস্টিক (Plastic) : পলিমারের উপর টান বা পীড়ন প্রয়োগের ফলে যেসব পলিমারের আকারের স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে তাদের পাস্টিক বলা হয়ে থাকে। প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থগুলো আংশিক কেলাসাকার এবং রবারের তুলনায় বেশি শক্তিশালী হয়। তবে বেশ কিছু প্রাস্টিক আবার শক্ত, দৃঢ় ও অনমনীয়। যেমন- পলিস্ট্যাইরিন, ফেনল- ফরমালডিহাইড রেজিন, ইউরিয়াফরমালডিহাইড রেজিন ইত্যাদি। আবার কিছু প্লাস্টিক আছে যেগুলো নরম, কোমল ও নমনীয় যেমন- পলিইথিলিন, পলিপ্রোপিলিন বা পলি, পলিভিনাইল অ্যাসিটেট ইত্যাদি। পাস্টিক জাতীয় পদার্থগুলো রবারে তুলনায় কম প্রসারণশীল এবং এদের টানশক্তির মান সাধারণত 400 psi হতে 15000 psi হয়ে থাকে।
(গ) তন্তু (Fiber): এদের ক্ষেত্রে, এদের দৈর্ঘ্য ও ব্যাসের অনুপাত অন্ততপক্ষে 100 হতে হয়। তবে কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত তন্তু ক্ষেত্রে এ মান 3000 পর্যন্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে পলিমার অণুগুলো রৈকিক শৃঙ্খলযুক্ত হয়ে থাকে। এদের পলিমার অণুর বর্তমান হাইড্রোজেন বন্ধন অণুকে আরও সুদৃঢ় করে থাকে। যেমন- তুলা, রেশম, পশম, পাট, টেরিলিন, সিল্ক, নাইল প্রভৃতি তন্তু জাতীয় পলিমারের উদাহরণ।
প্রশ্ন: পলিমার কী? পলিমারের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর । (Polymer and it’s classification)
উত্তর: গ্রিক শব্দ পলি (poly) অর্থ বহু এবং মেরোস (meros) অর্থ অংশ বা একক (unit)। সুতরাং ছোট একক অণু থেকে বৃহৎ অণু সৃষ্টির প্রক্রিয়াই হচ্ছে পলিমারকরণ। অর্থাৎ যে বিক্রিয়ায় একই যৌগের (যেমন- অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন) বহুসংখ্যক অণু পরস্পর যুক্ত হয়ে বৃহৎ অণু বিশিষ্ট নতুন যৌগ উৎপন্ন করে, সে বিক্রিয়াকে পলিমারকরণ বলে এবং উৎপন্ন যৌগকে পলিমার বা মূল যৌগকে মনোমর (monomer) বলে ।
যেমন- উচ্চ চাপে (1000 – 1200atm) ও 100 – 200°C তাপমাত্রায় সামান্য অক্সিজেনের উপস্থিতিতে 600 – 1000 ইথিন অণুর সংযোগে পলিথিন উৎপন্ন হয়।।
যেমন:
পলিমারকরণ বিক্রিয়া
(Polymerization reaction)
পলিমারকরণ বিক্রিয়া দু’প্রকার। যথা-
(ক)সংযোজন বা যুত বা চেইন পলিমারকরণ (Addition or chain polymerization) : যে পলিমারকরণ বিক্রিয়ায় কোন ক্ষুদ্র পদার্থের অপসারণ ব্যতীত মনোমার অণুসমূহ পরস্পর যুক্ত হয়ে দীর্ঘ শিকল পলিমার গঠন করে এবং গঠিত পলিমার এর আণবিক ভর মনোমারের আণবিক ভরের পূর্ণ গুণিতক হয় তাকে সংযোজন পলিমারকরণ বলে। সাধারণত, দ্বিবন্ধনযুক্ত যৌগসমূহ যেমন অ্যালকিন, প্রতিস্থাপিত অ্যালকিন ও ভিনাইল যৌগসমূহে সংযোজন পলিমারকরণ ঘটে।
(i) পলিথিন: 1000 – 1200 বায়ুচাপে ইথিন গ্যাসকে তরলীভূত করে সামান্য অক্সিজেনের উপস্থিতিতে 200°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে ইথিনের অসংখ্য অণু পরস্পর যুক্ত হয়ে যুত পলিমার পলিথিন গঠন করে। পলিথিন একটি সাদা, অস্বচ্ছ ও শক্ত প্লস্টিক পদার্থ।
nH2C = CH2→ -CH2-CH2-n এখানে, n = 600 – 1000
(ii) পলিপ্রপিন: হেপ্টেনে দ্রবীভূত প্রপিনকে 140 বায়ুচাপে TiCl3 এর উপস্থিতিতে 120°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে প্রপিনের অসংখ্য অণু যুক্ত হয়ে পলিপ্রপিন গঠন করে। এটিও শক্ত প্লাস্টিক।
(iii) পলিক্লোরোইথিন (পলিভিনাইল ক্লোরাইড) : ইথাইন (অ্যাসিটিলিন) ও শুষ্ক HCl থ্রাসের মিশ্রণকে 150–250°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত মারকিউরিক ক্লোরাইডের উপর দিয়ে চালনা করলে উভয়ই সংযোজিত হয়ে ভিনাইল ক্লোরাইড বা ক্লোরোইথিন উৎপন্ন হয়। ক্লোরোইথিনকে জৈব পারঅক্সাইড যেমন, টারসিয়ারী বিউটাইল পারঅক্সাইডের উপস্থিতিতে উচ্চ চাপে উত্তপ্ত করলে পলিক্লোরোইথিন বা পলিভিনাইল ক্লোরাইড (PVC) উৎপন্ন হয়।
(iv) পলিফিনাইল ইথিন (পলিস্টারিন): ফিনাইল ইথিন বা স্টাইরিন একটি তরল পদার্থ । একে প্রায় 1000 বায়ুচাপে অথবা বিভিন্ন লুইস এসিডের (H2SO4, AlCl3) ইত্যাদি) উপস্থিতিতে উত্তপ্ত করলে পলি স্টাইরিন উৎপন্ন হয়। এদিকে বেনজিনের সঙ্গে ইথিলিনের সংযোগে ফ্রিডেলক্রাফট বিক্রিয়ায় স্টাইরিন পাওয়া যায়।
(v) পলি টেট্রাফ্লোরোইথিন (টেফলন) : টেট্রাফ্লোরোইথিনকে ফেনটন বিকারক অর্থাৎ FeSO4, ও H2O2, এর উপস্থিতিতে উত্তপ্ত করলে তা থেকে সংযজন পলিমারকরণ প্রক্রিয়ায় পলিটেট্রাফ্লোরোইথিন গঠিত হয়। এটি বাণিজ্যিকভঅবে টেফলন নামে পরিচিত। এটি একটি অদাহ্য, এসিড ও ক্ষারে নিষ্ক্রিয় এবং বিদ্যুৎ নিরোধী শক্ত ননস্টিকিং প্লাস্টিক।
পলিপ্রোপিনিল: এটি পলিথিনের চেয়ে শক্ত প্লাস্টিক। এটি দড়ি, কার্পেট, বোতল, পাইপ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
পিভিসি: পিভিসি অত্যধিক শক্ত পুস্টিক। গৃহ নির্মাণের কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বৈদ্যুতিক সামগ্রী পানির পাইপ, কৃত্রিম চামড়া, রেইনকোট ও রেকর্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
পলিস্টাইরিন: প্যাকেজিং উপাদান, ফোমের সামগ্রী ও তাপ নিরোধকের (Insulator) কাজে ব্যবহৃত হয়। কৃত্রিম রাবার উৎপাদনেও এটি ব্যবহৃত হয়।
টেফলন: এটি অত্যন্ত শক্ত প্লাস্টিক। টেফলন তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী, ননস্টিক রান্নার প্যান, বৈদ্যুতিক ইনসুলেটর প্রভৃতি তৈরিতে এ পলিমার ব্যবহার হয়।
(খ) কনডেনসেশন পলিমার বা কো পলিমার: দুই বা ততোধিক ভিন্ন কার্যকরী মুলকযুক্ত মনোমার অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে এ জাতীয় পলিমার অণুর সৃষ্টি করে থাকে। তবে এ জাতীয় পলিমার অণুর সৃষ্টির সময় H2 0, NH3, অ্যালকোহল বা অন্য কোনো অণুর অপসারণ ঘটে থাকে। যেমন- নাইলন 6, 6, পলিএস্টার, পলিঅ্যামাইড, পলিফসফোনেট পলিকার্বনেট ইত্যাদি এ জাতীয় পলিমারের উদাহরণ।
(i) নাইলন 6, 6 : অ্যাডিপিক এসিড HOOC- CH24 – COOH ও হেক্সামিথিলিন ডাইঅ্যামিন H2N -CH26 – NH2) এ দুটি মনোমার অণু হতে পানির অপসারণের ফলে নাইলন 6, 6 পলিমার অণুর সৃষ্টি হয়।
(ii) পলিইর্থিলিন টেরিথ্যালেট : বেনজিন-1, 4-ডাই কার্বক্সিলিক এসিড বা থ্যালিক এসিড ও ইথেন 1, 2 ডাইঅল বা ইথিলিন গ্লাইকল এ দুটি মনোমার অণু হতে পানির অণুর অপসারণের ফলে পলিথিলিন টেরিথ্যালেট পলিমার অণুর সৃষ্টি হয়। এটি বাজারে ডেক্রন বা টেরিলন নামে পরিচিত।
(iii) ইউরিয়া ও মিথ্যান্যাল (H – CHO) এর ঘনীভবন পলিমারকরণ বিক্রিয়ায় ফরমিকা উৎপন্ন হয়।
একটি খুবই সুদৃঢ় থার্মোসেটিং পলিমার। এর দ্বারা বৈদ্যুতিক চকেট, মাস্টার গাম প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।
মেলামাইন: প্রভাবক TiO2, এর উপস্থিতিতে ইউরিয়া বা কার্বামাইডকে উত্তপ্ত করলে মেলামাইন উৎপন্ন হয়। মেলামাইন হলো একটি পলি অ্যামাইড ক্রসলিংক থার্মোসেটিং পলিমার। প্রতিদিনের ব্যবহার্য কাপ, প্লেট, বাটি ইত্যাদি কোকারিজ প্রস্তুত করতে এর ব্যবহার খুবই ব্যাপক। আগুনরোধী কাপড়। প্রস্তুতিতে এর ব্যবহার আছে। মেলামাইনের একটি ক্ষতিকর ব্যবহারও আছে । অসাধু জনসাধারণ মেলামাইনকে বেবি মিলকের সাথে ভেজাল হিসেবে মিশ্রিত করে থাকে। ফলে এটি শরীরে প্রবেশ করে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করে। এটি থেকে উৎপন্ন সায়ানো ইউরিক এসিড কিডনিকে নষ্ট করে দেয়।
মেলাডুর: মেলাডুর হলো মেলামাইন ও মিথান্যাল এর ঘনীভবন পলিমার। মেলামাইন ও মিথান্যালকে উত্তপ্ত করলে সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে মাধ্যমিক যৌগ উৎপন্ন হয়। এ মাধ্যমিক যৌগকে উত্তপ্ত করলে প্রতি দুই অণু হতে এক অণু পানির অপসারণের ফলে মেলামাইনের পলিমার মেলাডুর উৎপন্ন হয়।
পলিমারকরণ বিক্রিয়া : “ব্যাকেলাইট” প্লাস্টিক গঠন বিক্রিয়ার শর্ত ভেদে ফেনল ও মিথান্যাল এর বিভিন্ন কাঠামোর শাখাযুক্ত ত্রিমাত্রিক ঘনীভবন পলিমার উৎপন্ন হয়। যেমন- এসিড বা ক্ষারের উপস্থিতিতে ফেনলকে মিথান্যালের সাথে উত্তপ্ত করলে “ব্যাকেলাইট” নামক পাস্টিক এর বৃহৎ অণু উৎপন্ন হয়। ব্যাকেলাইট প্রাস্টিক দ্বারা গানের রেকর্ড ও টেলিফোন সেট তৈরি করা যায় । বৈদ্যুতিক মালামাল যেমন- পাগ, সকেট তৈরিতেও ইহা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
প্লাস্টিসিটি
(Plasticity)
প্রশ্ন: থার্মোপ্লাস্টিক এবং থার্মোসেটিং প্লাষ্টিক বলতে কী বুঝ? (Thermoplastic and thermosetting plastic)
উত্তর : থার্মোপ্লাস্টিক গুলো তাপ প্রয়োগে নরম হয়ে গলে যায় এবং শীতল করলে পুনরায় পূর্বের মত কঠিন হয়। এ প্রক্রিয়া পুন:পুন করা যায় । এরা গঠনে সরল শিকল পলিমার। যেমন- পলিথিন পলিষ্টারিন ইত্যাদি। এরা দীর্ঘ শৃংখলযুক্ত এবং কম দৃঢ়।
অপরদিকে, থার্মোসেটিং পুষ্টিকগুলো প্রস্তুতকালে প্রথমবারে মত তরল থেকে শীতল করে, কঠিন করা যায়। এর পর একে বানানো যায় না। এরা গঠনে ক্রস লিংক পলিমার। যেমন- মেলামাইন, ব্যাকেলাইট, ইত্যাদি। এরা ত্রিমাত্রিকগঠনের এবং অধিক দৃঢ়।
প্রশ্ন: গ্লাইকোসাইড বন্ধন কী? (Glycosidic bond)
উত্তর: দুটি মনোস্যাকারাইড অণুর মধ্যে ঘনীভবন বিক্রিয়ার ফলে এক অণু পানি অপসারিত হয়ে ডাই স্যাকারাইড অণু গঠিত হয়। তখন উৎপন্ন ডাই স্যাকারাইড অণুর উভয় মনোস্যাকারাইড এর মধ্যে যে C-0-C নতুন বন্ধন সৃষ্টি হয় তাকে গ্লাইকোসাইড বন্ধন বলে। এটি দুই প্রকার ।
i) -গ্লাইকোসাইড বন্ধন: দুই অণু α-D গ্লুকোজের মধ্যে এক অণু পানি অপসারণের মাধ্যমে যে গ্লাইকোসাইড বন্ধন তৈরি হয়। তাকে গ্লাইকোসাইড বন্ধন বলে। এক্ষেত্রে বন্ধনটি একটি অণুর এক নং কার্বনের সাথে অপর অণুর 4 নং কার্বন মধ্যে বন্ধনটি গঠিত হয়। স্টার্চের মধ্যে গ্রকোজ অণুসমূহ পরস্পরের সাথে -গ্লাইকোসাইড বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। যেমন-
ii) -গ্লাইকোসাইড বন্ধন: ২ টি-D গ্লোকোজে 1 ও 4 নং কার্বনের মাঝে এ বন্ধন গঠিত হয় ।
প্রশ্ন: স্টার্চ এবং সেলুলোজের গঠন এর মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ কর। (The difference between the composition of starch and cellulose)
উত্তর: স্টার্চ হল α-D গ্লুকোজের একটি পলিমার। এটি সেলুলোজ অপেক্ষা বড় পলিমার । এটি অ্যামাইলেজ ও অ্যামাইলোপেকটিন নামক দুটি উপাদান দ্বারা গঠিত। অ্যামাইলোজ এর মধ্যে C-1, 4-α গ্লাইকোসাইড বন্ধন বিদ্যমান । কিন্তু অ্যামাইলোপেকটিন এর মধ্যে এবং C-1, 4 এর মাধ্যমে সরল শিকল এবং C-1, 6 এর মাধ্যমে শাখা শিকল গঠিত হয়। সেলুলোজ হল β-D গ্লুকোজের সরল পলিমার। যাতে C-1,4 B গ্লাইকো সাইডিক বন্ধন বিদ্যমান।
স্টার্চ হলো মানুষের খাদ্য। সেলুলোজ হল গরু ছাগলের খাদ্য। কারন এদের পাকস্থলীতে গুকোসিডেজ নামক এনজাইম উপস্থিতিতে থাকে যা সেলুলোজের -গ্লাইকোসাইডি বন্ধনকে ভাঙতে পারে। কিন্তু মানুষের পাকস্থলীতে এ ধরনের এনজাইম নেই।
প্রশ্ন: স্টার্চ আয়োডিনের সংস্পর্শে নীল বর্ণ ধারণ করে কেন? (Starch turns blue on contact with iodine)
উত্তর: স্টার্চের উপাদান অ্যামাইলোজ এর কারণে এটি নীল বর্ণ ধারণ করে। অ্যামাইলোজের গঠন প্যাচানো ফিতার মত । প্যাচানো অংশের ফাঁকা স্থানে আয়োডিন অণু আবদ্ধ হয়ে জটিল যৌগ গঠন করে। তখন আয়োডিন পরমাণুগুলোর বহি:স্তরের e- রুপান্তরের কারণে শক্তি শোষণ করে নীল বর্ণ তৈরি করে।
প্রশ্ন: পেপটাইড বন্ধন কী? (Peptide bond)
উত্তর: একটি অ্যামাইনো এসিড এর কার্যক্সিল মূলক এবং অন্য একটি অ্যামাইনো এসিডের অ্যামিন মূলকের সাথে বিক্রিয়ায় পানির অণুর অপসারণের মাধ্যমে যে অ্যামাইড বন্ধন গঠিত হয় তাকে পেপটাইড বন্ধন বলে। দুটি অ্যামাইনো এসিড অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে ডাই পেপটাইড বন্ধন, 50-100 টি অ্যামাইনো এসিড অণু যুক্ত হয়ে পেপটাইড বন্ধনের মাধ্যমে একটি প্রোটিন অণু গঠন করে। অর্থাৎ প্রোটিন হলো পলিপেপটাইড।
প্রশ্ন: জুইটার আয়ন কী?
উত্তর: অ্যামাইনো এসিডের অ্যামিনো মূলকটির ক্ষারীয় এবং কার্বোক্সিল মূলক এর অম্লধর্ম আছে । এদের মধ্যে অন্ত: অম্ল-ক্ষার বিক্রিয়ার যে উভয়ধর্মী আয়ন তৈরি করে তাকে জুইটার আয়ন বলে।
প্রশ্ন: আইসোইলেকট্রিক 𝒑𝑯 কী? (Isoelectric 𝒑𝑯)
উত্তর: একটি নির্দিষ্ট pH পর্যন্ত জুইটার আয়ন কোন ধরনের চার্জ বহন করে না। অর্থাৎ বৈদ্যুতিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে তাকে ঐ অ্যামাইনো এসিডের আইসো ইলেকট্রিক pH বলে। প্রতিটি অ্যামাইনো এসিডের এক একটি নির্দিষ্ট pH মান আছে যার মাধ্যমে ঐ অ্যামাইনো এসিডকে শনাক্ত করা যায়।
প্রশ্ন: ইউরোট্রোপিন বা হেক্সামিন কী? (Urotropine or hexamine)
উত্তর: হেক্সামিথিলিন টেট্রাঅ্যামিনকে ইউরোট্রোপিন বলে । এটি একটি চাক্রিক যৌগ-
প্রস্তুতি: মিথান্যালের 40% জলীয় দ্রবণকে গায় NH3 দ্রবণের সাথে উত্তপ্ত করলে হেক্সামিন উৎপন্ন হয়।
6HCHO + 4NH3 ∆→ CH26N4 + 6H2O
ব্যবহার:- বাতজ্বর ও মূত্রাশয় রোগের ঔষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন: জৈব যৌগের বিশুদ্ধতার মানদন্ডগুলো কী কী? (Criteria for the purity of organic compounds)
উত্তর : জৈব যৌগের বিশুদ্ধতার মানদন্ডগুলো হলো গলনাংক, স্কুটনাংক, ঘনত্ব, প্রতিসারংক ইত্যাদি। তবে কঠিন জৈব যৌগের ক্ষেত্রে গলনাংক এবং তরল জৈব যৌগের ক্ষেত্রে স্ফুটনাংককে বিশুদ্ধতার মানদন্ড হিসেবে ধরা হয়।
IR রশ্মির মাধ্যমে জৈবযৌগের কার্বনিল মূলক শনাক্তকরণ
(Carbonyl-based identification of organic compounds by IR rays)
IR রশ্মির মাধ্যমে জৈব যৌগে কার্যকরী মূলক শনাক্তকরণ পদ্ধতি বর্ণনা কর। (Method of identification of organic compounds using IR rays)
IR রশির তরঙ্গদৈর্ঘ্য হল: 2.5um থেকে 25um (λ)
এবং তরঙ্গ সংখ্যা হল v- : 4000cm-1 থেকে 400cm-1 (v- =1 )
এর মধ্যে 4000 – 1400cm-1 অঞ্চল কার্যকরী মূলক সনাক্তকরণে এবং 1400 – 650cm-1 অঞ্চল ফিঙ্গার প্রিন্ট অঞ্চল জৈব যৌগের অবলোহিত বর্ণালীকে % of Transmitance এর বিপরীতে তরঙ্গ সংখ্যায় অংকন করা হয়।
জৈব যৌগের সৃষ্ট IR বর্ণালিকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়:
(১) আণবিক কাঠামোর কম্পনজনিত শোষণ ব্যান্ড অঞ্চল (Skeletal region) : এক্ষেত্রে – = (1400-650)cm-1 হয়। কাঠামো কম্পন ব্যান্ডকে (একাধিক ব্যান্ড হতে পারে) ফিঙ্গার প্রিন্ট অঞ্চল (Finger print region) বলা হয়। কারণ এ ব্যান্ডটি যৌগের নিজস্ব পরিচয়দায়ক এবং এ ব্যান্ড থেকে যৌগ অণুর গঠন প্রমাণ নমুনা যৌগের IR-বর্ণালির সাথে তুলনা করে শনাক্ত করা হয়। IR বর্ণালিতে সৃষ্ট নির্দিষ্ট ফ্রিকুয়েন্সির সিগন্যালকে ব্যান্ড বলে ।
(২) কার্যকারী মূলকের কম্পনজনিত শোষণব্যান্ড অঞ্চল (Functional groups region) : এক্ষেত্রে – = (1000-4000)cm-1 হয়। প্রতিটি কার্যকরী মূলকের নির্দিষ্ট তরঙ্গ-সংখ্যার পরিসরে শোষণ ব্যান্ড আছে। তাই ঐ সব তরঙ্গ সংখ্যার ব্যান্ড থেকে জৈব যৌগের নির্দিষ্ট কার্যকরীমূলক শনাক্ত করা যায়।
সাধারণত জৈব অণুতে স্থায়ী এবং পরিবর্তনশীল ডাইপোল মোমেন্ট থাকায় এটি IR সক্রিয় হয়। IR রশিার চেয়ে বেশি শক্তিযুক্ত UV ও দৃশ্যমান (Vis) রশ্মি শোষণের ফলে যৌগের আণবিক অরবিটালের ইলেকট্রন ও নি:সঙ্গ ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তরে স্থানান্তরের ফলে আণবিক UV-Vis বর্ণালি সৃষ্টি হয়। অপরদিকে যৌগের অণুস্থিত বিভিন্ন পরমাণুর সমযোজী বন্ধনের বিভিন্ন প্রকার কম্পন (Vibration) শক্তির পার্থক্য থেকে অণুটিতে ডাইপোল মোমেন্টের পরিবর্তন ঘটে। তখন সমযোজী অণুর ডাইপোল মোমেন্টের পরিবর্তন শক্তির সমতুল্য শক্তি IR রশ্মি থেকে শোষিত হয়। এর ফলে সৃষ্ট বর্ণালিকে IR শোষণ বর্ণালি বলে ।
সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ পরমাণুগুলো সর্বদা কম্পমান (Vibration) ও আবর্তনশীল (rotating) থাকে। যেমন H3C – CH3; অণুতে C – C বন্ধন বরাবর দুটি CH3 মূলক rotate করে। আবার প্রত্যেক পরমাণু এর বন্ধন বরাবর Vibrate করে। তখন সমযোজী বন্ধনটি পরমাণুর ভর ও বন্ধনের দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করে নমনীয় (flexible) স্প্রিং এর মতো সরলরেখায় প্রসারণ (stretch) ও সংকোচন (contract) এবং কৌণিক পরিবর্তন যেমন bending, twisting, rocking ও wagging করে থাকে। আণবিক কম্পনের শক্তির পরিমাণ নির্ভর করে- (১) বন্ধনের নমনীয়তা, (২) কম্পনের প্রকৃতি ও (৩) পরমাণুর ভরের ওপর। পরমাণুর দুটি কক্ষপথের শক্তির পার্থক্যের মতো এক্ষেত্রেও প্রতিটি কম্পনের শক্তির পার্থক্য নির্দিষ্ট ফ্রিকুয়েন্সির তরঙ্গ শক্তিযুক্ত হয়, যা IR রশ্মির বিভিন্ন ফ্রিকুয়েন্সির সাথে মিল থাকে এবং তা IR এর 2.5 – 25μm তরঙ্গ দৈর্ঘ্য পরিসরে হয়।
IR এর শোষণের ফলে কোনরূপ ইলেকট্রনীয় স্থানান্তর না ঘটলেও সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ পরমাণু বা মূলকের কম্পনীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করার মত সামর্থ্য রাখে। তবে একটি অণুতে উপস্থিত একাধিক কার্যকরী মূলক কেবলমাত্র অবলোহিত রশ্মির কিছু কিছু নির্ধারিত ফ্রিকুয়েন্সি শোষণ করতে পারে। এর ফলে পরমাণু সমূহের পরস্পরের সাপেক্ষে বিভিন্ন মাত্রার কম্পন দেখায়। কম্পন দুই ধরনের হতে পারে ।
১. প্রসারণ
২. বক্রকরণ বা ব্যান্ডিং (bending)
প্রসারণকে আবার দুইভাগে করা যায়।
১. প্রতিসম ।
২. অপ্রতিসম
চিত্র. পানির অণুর প্রসারিত এবং নমনিত কম্পন
বক্রকরণ অপেক্ষা প্রসারণের জন্য অধিক শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই শুধুমাত্র প্রসারণের জন্য যে পরিমাণ শক্তিশোষিত হয় তার ক্ষেত্রে যে সকল রেখাগুলো পাওয়া যায়। সে রেখাগুলো দ্বারাই সাধারণত কার্যকরী মূলক শনাক্ত করা হয়। অধিকাংশ জৈব যৌগে কার্বনিল মূলক আছে। তাই, সর্বপ্রথম এ মূলকটি শনাক্ত করা হয়।
নিম্নরূপে বিভিন্ন কার্যকরী মূলক শনাক্ত করা যায়।
১. IR এর ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কার্বনিল মূলক শনাক্ত করা হয়। এর জন্য তরঙ্গসংখ্যার সীমানা হচ্ছে 1850 – 1650 cm-1। তবে বিভিন্ন কারণে এর সীমানা পরিবর্তন হতে পারে। যেমন-
(i) আবেশীয় প্রভাব
(ii) অনুরনন প্রভাব
(iii) H-বন্ধন প্রভাব
অ্যালডি হাইড O||R – C – H | কিটোন O||R – C – R | কার্বক্সিলিক এসিড O||R – C – OH | এস্টার O||R – C – R – H | অ্যামাইড O||R – C – NH2 | এসিড হ্যালাইড O||R – C – Cl | এসিড অ্যানহাইড্রাইড O||R – C – O – C – R |
1725 – 1730Cm-1 | 1715 Cm-1 | 1710 Cm-1 | 1735 Cm-1 | 1690 Cm-1 | 1800 Cm-1 | ১ম – 1760 Cm-1২য় – 1810 Cm-1 |
এই চার্টের যৌগগুলো শুধুমাত্র কার্বনিল মূলকের জন্য তরঙ্গ সংখ্যা দেখান হয়েছে।
অ্যালডিহাইড শনাক্তকরণ: (-CO-H) (Aldehyde Identification (-CO-H)):
এক্ষেত্রে 1725 cm এর কাছাকাছি -CO- মূলকের জন্য একটি রেখা পাওয়া যায়। তবে C – H প্রসারণের জন্য 2750 cm-1 এবং 2850 cm-1 অঞ্চলে দুটি দুর্বল রেখা পাওয়া যায়। যা কিটোনের ক্ষেত্রে, অনুপস্থিত থাকে। C – H এর এ দুটি রেখার মাধ্যমে অ্যালডিহাইড এবং কিটোনের মধ্যে পার্থক্য করা যায় । HCHO, CH3CHO এর ক্ষেত্রে C = 0 প্রসারণের জন্য যথাক্রমে 1750 cm-1 এবং 1745 cm-1 এ শোষণ দেখায়।
চিত্র : বিউটানলের IR বর্ণালি
কিটোন শনাক্তকরণঃ (-CO- ) (Ketone Identification (-CO- ): এক্ষেত্রে কার্বনিল মূলকের উভয় পাশে অ্যালকাইল মূলকের +I ধর্মের কারনে >C=O মূলকটি তথা বন্ধনটি দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে এক্ষেত্রে নিম্ন তরঙ্গ সংখ্যাতে তথা 1715 cm-1 এ কার্বনিল মূলকের জন্য একটি রেখা পাওয়া যায়।
Wavenumber/cm-1
চিত্রঃ প্রোপানোনের IR বর্ণালি
অ্যালকোহল শনাক্তকরণ: -C||-O-H (Alcohol identification -C||-O-H): অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে C-O এবং O – H এর প্রসারণের জন্য দুটি রেখা পাওয়া যায়। C- O এর প্রসারণ কম্পঙ্কটি 1250 থেকে 1000 cm-1 সীমার মধ্যে থাকে। তবে O– H বন্ধনের প্রসারণের জন্য কম্পাঙ্কটি মূলত হাইড্রোজেন বন্ধন গঠনের উপর নির্ভর করে। যদি H বন্ধন না থাকে তাহলে 3650 থেকে 3600cm- এর মধ্যে একটি তীক্ষ্ম রেখা দেখা যায় কিন্তু H বন্ধন উপস্থিত থাকলে 3500 থেকে 3200cm-1 এর মধ্যে একটি প্রশস্ত চূড়া দেখা যায়। কারণ H বন্ধন ০ – H বন্ধনকে দুর্বল করে দেয়।
যৌগ | C -O | O-H |
1°alc | 1050cm-1 | 3690 |
2°alc | 1100cm-1 | 3630 |
3°alc | 1150cm-1 | 3620 |
ফেনল | 1220 | 3610 |
তরঙ্গ সংখ্যা, v (cm-1)
চিত্রঃ ইথানলের IR বর্ণালি
তরঙ্গ সংখ্যা, v (cm-1)
চিত্রঃ ফেনেলের অবলোহিত IR বর্ণালি
কার্বক্সিলিকমূলক সনাক্তকরণ : -CO -O-H (Carboxylic identification -CO -O-H)
এক্ষেত্রে -CO – , C – ০, ০ – H এর জন্য তিনটি রেখা পাওয়া যায়। এর মধ্যে এদের তরঙ্গ সংখ্যা যথাক্রমে 1730 – 1700, 1320 – 1210 এবং 3400 – 2400 cm-1. অনুরণন প্রভাব দ্বারা =C=O এর কার্বন অক্সিজেন দ্বি বন্ধন একক বন্ধনে রূপান্তরিত হয়। তাই অ্যালডিহাইডের চেয়ে কম তরঙ্গসংখ্যা অঞ্চলে জৈব এসিডের C =O প্রসারণ ব্যান্ড পাওয়া যায়।
লঘু দ্রবণে জৈব এসিডের C =O প্রসারণ ব্যান্ড 1725 – 1700 cm-1 অঞ্চলে পাওয়া যায়। তবে জৈব এসিডের নিম্নতর সদস্য (যেমন CH3COOH) গাঢ় দ্রবণে ডাইয়ার গঠন করায় C =O বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং C =O প্রসারণ। ব্যান্ড ডানদিকে সরে 1710 cm-1 অঞ্চলে পাওয়া যায় ।
CH3COOH এর ডাইমার (1710 cm-1)
ইথানৈয়িক এসিড
অ্যামাইড (R – CO – NH2) (Amide (R – CO – NH2)): অ্যামাইডে অনুরণন প্রভাব দ্বারা C=O এর দ্বিবন্ধন একক বন্ধনে পরিণত হয়, তাই C =O প্রসারণ ব্যান্ড সাধারণ C =O প্রসারণ অপেক্ষা ডানদিকে সরে কম তরঙ্গ সংখ্যা অঞ্চলে পাওয়া যায় । য্যামাইডের C =O প্রসারণ ব্যান্ড অঞ্চল হলো 1670 – 1640 cm-1
এস্টার (R – CO -O – R) (Ester (R – CO -O – R)): সাধারণ এস্টার C =O প্রসারণ ব্যান্ড পাওয়া যায় 1750 – 1730 cm-1 অঞ্চলে এস্টারের অ্যালকক্সি অক্সিজেনের ঋণাত্মক আবেশীয় প্রভাবে C =O বন্ধন সবল হয়ে পড়ে; যে কারণে এস্টারের C =O প্রসারণ ব্যান্ড অ্যালডিহাইড অপেক্ষা বামদিকে সরে যায়।
এসিড হ্যালাইড (R – CO – CI) : (Acid Halide (R – CO – CI)): এসিড হ্যালাইডের কার্বনিল কার্বনের সাথে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল হ্যালোজেন থাকায় ঋণাত্মক আবেশীয় প্রভাবে C =O বন্ধন সবল হয়। এ কারণে হ্যালাইডের C =O প্রসারণ ব্যান্ড অ্যালডিহাইড, এস্টার ও এসিড অপেক্ষা বামদিকে সরে যায়। R-C0 – Cl এর C =O প্রসারণ ব্যান্ড প্রায় 1800cm-1 অঞ্চলে পাওয়া যায়।
এসিড অ্যানহাইড্রাইড (R – CO -O – C0 – R) : (Acid Anhydride (R – CO -O – C0 – R) ): এসিড অ্যানহাইড্রাইডে সর্বদা দুইটি C =O প্রসারণ ব্যান্ড পাওয়া যায়। অ্যানহাইড্রাইড C =O এর প্রতিসম এবং অপ্রতিসম প্রসারণ ঘটে। প্রতিসম প্রসারণের জন্য 1760 cm-1 এবং অপ্রতিসম প্রসারণের জন্য 1850 cm-1 অঞ্চলে ব্যান্ড পাওয়া যায়।
(প্রতিসম প্রসারণ) 1760 cm-1
(অপ্রতিসম প্রসারণ) 1810 cm-1
আরও দেখুন...